কুরবানীর ইতিহাস
কুরবানীর ইতিহাস কুরবানী (আরবি: قربانى), কুরবান অথবা আদ্বহা বা আযহা ( أضحية) কে ইসলামী আইন হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যা ঈদ উল আযহার সময় পশু উৎসর্গের অনুষ্ঠান। ইসলামি মতে কুরবানী হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্দিষ্ট পশু জবেহ করা। মুসলমানদের পবিত্র আল কোরআনের তিনটি স্থানে কুরবানির উল্লেখ আছে যার একটি পশু কুরবানির ক্ষেত্রে এবং বাকি দুটি সাধারণ ভাবনার কাজ বোঝাতে যা দ্বারা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়। ঈদ উল আযহার নির্দিষ্ট দিনের বাইরে খাওয়ার জন্যে পশুহত্যা কে ইসলামে জবেহ বলা হয়ে থাকে।
কুরবানী অর্থ কি কুরবানী সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
কুরবানী (আরবি: قربانى), কুরবান অথবা আদ্বহা বা আযহা ( أضحية) কে ইসলামী আইন হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যা ঈদ উল আযহার সময় পশু উৎসর্গের অনুষ্ঠান।
কুরবানী অর্থ কি কুরবানী সম্পর্কে কুরআনের আয়াত আরবি করব বা কুরবান (قرب বা قربان) শব্দটি উর্দূ ও ফার্সীতে (قربانى) কুরবানি নামে রূপান্তরিত। এর অর্থ হলো-নৈকট্য বা সান্নিধ্য। কুরআনুল কারিমের কুরবানির একাধিক সমার্থক শব্দের ব্যবহার দেখা যায়।
>>نحر অর্থে। আল্লাহ বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য নামাজ এবং কুরবানি আদায় করুন। এ কারণে কুরবানির দিনকে يوم النحر বলা হয়।
>> نسك অর্থে। আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু; সবই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য।’ (সুরা আনআ’ম : আয়াত ১৬২)
>> منسك অর্থে। আল্লাহ বলেন, ‘ لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكاً ‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি।’ (সুরা হজ্জ : আয়াত ৩৪)।
>> الاضحى অর্থে। হাদিসের ভাষায় অর্থে কুরবানির ঈদকে (عيد الاضحى) ‘ঈদ-উল-আজহা’ বলা হয়।
কুরবানী (আরবি: قربانى), কুরবান অথবা আদ্বহা বা আযহা ( أضحية) কে ইসলামী আইন হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যা ঈদ উল আযহার সময় পশু উৎসর্গের অনুষ্ঠান।
কুরবানি সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশনা
কুরবানির হলো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য মাধ্যম। কুরবানির শুরু হয়েছিল হজরত আদম আলাইহিস সালামের দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের মধ্যে সংঘটিত করবানির মাধ্যমে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসূল! আপনি তাদেরকে আদমের পুত্রদ্বয়ের বৃত্তান্ত যথাযথভাবে পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়েই কুরবানি করেছিল, তখন একজনের কুরবানি কবুল হ’ল এবং অন্যজনের কুরবানী কবুল হ’ল না।
সে (কাবিল) বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব।
অপরজন (হাবিল) বলল, অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কুরবানি কবুল করেন।
সে (হাবিল) বলল, যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার প্রতি হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।’ সুরা মায়েদা : আয়াত ২৭-২৮)
কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম
কোরবানির নিয়ম কানুন – সকল নিয়ম বিস্তারিত।
কোরবানির ঈদ কত তারিখে 2022 – ঈদুল আজহার কুরবানি
এ হলো কুরবানি কবুল হওয়া ব্যক্তির ভাবাবেগ ও মানসিকতা। কেননা কুরবানি তাকওয়াবান লোকদের আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য নিদর্শন।
কুরবানির প্রচলন হজরত আদম আলাইহিস সালামের যুগ থেকে শুরু হলেও মুসলিম উম্মাহ কুরবানি মূলতঃ হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আল্লাহর সন্তুষ্টির পরীক্ষায় হজরত ইসমাইল আলাইহি সালামকে কুরবানির স্মৃতিময় ঘটনা নিজেদের মধ্যে বিরাজমান করা।
আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে কঠিন অগ্নি পরীক্ষায় ফেলেছিলেন এ কুরবানির নির্দেশ প্রদান করে। যা তিনি হাসিমুখে পালন করে আল্লাহর প্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) কে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করলেন, তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে মাবনজাতির নেতা বানিয়ে দিলাম।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৪)
কেন কুরবানি প্রচলন!
হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম যখন চলাফেরা করার বয়সে উপণীত হলেন; তখন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় কুবানির জন্য স্বপ্নে আদিষ্ট হন। আর নবিদের স্বপ্নও কোনো কল্পনা প্রসূত ঘটনা নয় বরং তা ‘ওহি’ বা আল্লাহর প্রত্যাদেশ।
তখন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম পুত্র ইসমাইলকে বললেন, ‘হে ছেলে! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে জবেহ করছি। এ বিষয়ে তোমার অভিমত কি?
সে (হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম) বলল, ‘পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা পালন করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০২)
৯৯ বছরের বৃদ্ধ হজরত ইবরাহিম তার প্রাণপ্রিয় পুত্রকে আত্মনিবেদনে আল্লাহ তাআলা যে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছিলেন। আর তিনিও মিনা প্রান্তরে প্রাণাধিক সন্তানকে কুরবানির যে নির্দেশ পালন করেছিলেন।
আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাঁর মানসিকতা আল্লাহর নিকট কবুল হয়েগিয়েছিল। যা আজও মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ এ তিন দিনের যে কোনো একদিন পালন করে থাকেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানোর জন্য কুরবানি নয় বরং পশুকে জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনের পশু ও আমিত্বকে জবাই করার তাওফিক দান করুন। কুরবানির মাধ্যমে নিজেকে তাকওয়াবান হিসেবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
কুরবানীর ইতিহাস ও শিক্ষা ,
কুরবানী সম্পর্কে হাদিস ,
ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস ,
কুরবানী কার উপর ওয়াজিব ,
কুরবানির ইতিহাস আল কাউসার ,
কুরবানী শব্দের অর্থ কি ,
কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ,
কুরবানীর পশুর বয়স ,
ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস ,
কুরবানী কার উপর ওয়াজিব ,
কুরবানী সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ,
কুরবানীর নিয়ম ,
কুরবানীর ইতিহাস ও শিক্ষা ,
কুরবানির সমার্থক শব্দ কি ,
উযহিয়্যাহ শব্দের অর্থ কি ,
কুরবানী সম্পর্কে হাদিস ,
কোরবানির আয়াত ও হাদিস ,
কুরবানী কাকে বলে ,
কুরবানীর ফজিলতের বয়ান ,
কুরবানীর ইতিহাস ,
কুরবানীর ইতিহাস ও ফজিলত ,
কুরবানির ফজিলতের হাদিস ,
কুরবানী কার উপর ওয়াজিব ,
কুরবানীর বিধান ,
শাব্দিক অর্থ
কুরবানী শব্দটি হিব্রু কোরবান আর সিরিয়াক ভাষার কুরবানা শব্দদুটির সংগে সম্পর্কিত যার আরবী অর্থ “কারো নিকটবর্তী হওয়া”।
উৎপত্তি
ইসলামে কুরবানীর ইতিহাস বেশ প্রাচীন। আল কুরআনে হাবিল এবং কাবিলের উল্লেখ পাওয়া যায়। [২] হাবিল প্রথম মানুষ যে আল্লাহর জন্য একটি পশু কুুরবানী করেন । ইবনে কাসির বর্ণনা করেছেন যে, হাবিল একটি ভেড়া এবং তার ভাই কাবিল তার ফসলের কিছু অংশ স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদন করে। আল্লাহর নির্ধারিত পদ্ধতি ছিল যে আগুন আকাশ থেকে নেমে আসবে এবং গ্রহণযোগ্য কুরবানী গ্রহণ করবে। তদনুসারে, আগুন নেমে আসে এবং হাবিলের জবেহকৃত পশুটির কুরবানী গ্রহণ করে। অন্যদিকে কাবিলের ফসল কুরবানী প্রত্যাখ্যান করে। কাবিল এই ঘটনায় ঈর্ষান্বিত হয় ও সামাজিভাবে অপমানবোধ করে কুরবানী কবুল না হওয়ার বিষয়টি তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে, যা মানব ইতিহাসের প্রথম হত্যাকাণ্ড হিসেবে পরিচিত। কাবিল তার কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হওয়ায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেননি।
ইব্রাহীমের ত্যাগ
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তা’আলা ইসলামের রাসুল হযরত ইব্রাহীম কে স্বপ্নযোগে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কুরবানি করার নির্দেশ দেনঃ “তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি কর”। ইব্রাহীম স্বপ্নে এ আদেশ পেয়ে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন। ইব্রাহীম আবার ১০০টি উট কোরবানি করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এরপরেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছে তো এ মুহূর্তে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) ছাড়া আর কোনো প্রিয় বস্তু নেই। তখন তিনি পুত্রকে কোরবানির উদ্দেশ্যে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যখন ইব্রাহীম আরাফাত পর্বতের উপর তাঁর পুত্রকে কোরবানি দেয়ার জন্য গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তাঁর পুত্রের কোন ক্ষতি হয়নি। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি ঈদ উল আধহা নামে উদ্যাপন করে।
ধর্মীয় কুরবানী
ইসলামে, হিজরী ক্যালেন্ডারের ১২ তম চন্দ্র মাসের জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১৩ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানী করার সময় হিসেবে নির্ধারিত। এ দিনে বিশ্ব জুড়ে মুসলমানরা কুরবানী দেয় যার অর্থ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার খুুুশীর জন্য নির্দিষ্ট দিনে একটি পশুকে জবেহ করা। ইহা পুত্রের পরিবর্তে ইব্রাহিমের একটি মেষের আত্মত্যাগের পুনরাবৃত্তি, যা ইহুদীধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা এবং ইসলাম বিশ্বাস করে ঘটনাটিকে। এ উপলক্ষ্যে ইসলামি ধর্মপ্রচারকগণ উক্ত ঘটনাটির উল্লেখকরে মানবতায় সেবায় মুসলমানদেরকে তাদের সময়, প্রচেষ্টা এবং সম্পদ নিয়ে এগিয়ে আসতে উজ্জীবিত করে থাকে।
ফিকহের শাখা মেনে নেয় যে পশুটিকে অবশ্যই জবেহর নিয়ম মেনে হত্যা করতে হবে এবং পশুটি একটি গৃহপালিত ছাগল, ভেড়া, গরু বা উট হতে হবে।
শহীদ
ইসলামের জন্য শহীদ হওয়া বোঝাতে কুরবানী শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আবার ব্যক্তির সম্পদ ধর্মীয় উদ্দেশ্যে বিলিয়ে দেওয়াকে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী বলা হয়ে থাকে।