গোসলের দোয়া
উচ্চারণ :- নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফয়িল জানাবাতি।
অর্থ :- নাপাকি দূর করার উদ্দেশ্যে আমি গোসলের নিয়ত করিলাম।
গোসলের ফরজসমূহ :
গোসলের দোয়া-ফরজ গোসলের দোয়া- গোসলের মধ্যে তিনটি ফরজ যথা : (১) গড়গড়ার সহিত কুলি করা কিন্তু রোজা রাখাবস্থায় গড়গড়া করা নিষেধ। (২) নাকের ভিতরের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছাইয়া উত্তমরূপে নাক পরিষ্কার করা। (৩) মাথা হইতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছাইয়া ধৌত করা। উপরোক্ত তিনটি ফরজ কাজের মধ্যে একটিও ছুটিয়া গেলে কিংবা শরীরের একটি পশমের গোসালী শুকনা থাকিলে গোসল শুদ্ধ হইবে না।
অ্যালোভেরার উপকারিতা – অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম
গোসলের সুন্নতসমূহ :
গোসলের মধ্যে সুন্নত ছয়টি যথা : (১) উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা। (২) শরীরের কোথায়ও নাপাকি থাকিলে উহা ধৌত করা। (৩) লজ্জাস্থান ভাল করিয়া ধৌত করা। (৪) অজু করা। (৫) প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করিয়া ধৌত করা এবং (৬) গোসলের পরে গোসলের স্থান হইতে একটু সরিয়া যাইয়া দুই পা ধৌত করা।
অজু হলো নামাজে চাবি। অজু ব্যতিত ইসলামের প্রধান ইবাদত নামাজ আদায় করা যায় না। আর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম গোসল। অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য অজু ও গোসলের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক।
অজু ও গোসলের নিয়ম জানা সত্ত্বেও অনেকে অজু ও গোসলের আগে ও পরে রয়েছে কিছু দোয়া ও করণীয়। যা সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো-
রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বাংলা
ঘুম থেকে ওঠে প্রথমেই উভয় হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া। অতঃপর অজু এবং গোসলের শুরুতে-
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ অর্থাৎ দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি’ বলা।
অতঃপর অজুর মধ্যে বার বার এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর তাহলো-
اَللّهُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِىْ وَوَسِّعْ لِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ
‘আল্লাহুম্মাগফিরলি জামনি, ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিকলি ফি রিযক্বি।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দিন এবং আমার রিজিকে বরকত দিন।’ (নাসাঈ)
অজু ও গোসল করার পর আল্লাহর শোকরিয়া আদায় এবং দোয়া পড়া-
اَشْهَدُ اَنْ لَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ
اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِىْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসুলুহু।
ওযু ভঙ্গের কারণ কী কী এখানে দেওয়া হল।
আল্লাহুম্মা-ঝআলনি মিনাত-তাওয়্যাবিনা ওয়াজআলনি মিনাল মুতাত্বাহহিরিন।’
অজু ও গোসলের আগে ও পরে করণীয় হলো-
অজু ও গোসল করার আগে যদি কেউ ঘুম থেকে ওঠে, তবে তাকে অজু ও গোসলের পানির পাত্রে হাত না দিয়ে প্রথমে উভয় হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া।
অজু ও গোসলের আগে মেসওয়াক করে নেয়া।
দাঁত ও মুখ ভালোভাবে পরিস্কার করে নেয়া।
যখন গোসল করা হয় তখন খোলা স্থানে গোসল না করে পর্দার আড়ালে গোসল করা।
অজু ও গোসল করার পর তোয়ালে দিয়ে হাত, মুখ ও শরীর মুছে ফেলা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অজু ও গোসলের সময় ও আগে-পরের করণীয়গুলো আদায় করা এবং দোয়াগুলো যথাযথভাবে পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
গোসলের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বিদআত
নামায, রোযা, যাকাত, কুরবানি, ওযু, গোসল ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদতে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা কুরআন-সুন্নাহ ও সাহাবীদের আমল থেকে প্রমাণিত নয়। তাই তা বিদআত।
গোসলের শুরুতে “নাওয়াইতুল গোসলা লিরাফয়িল জানাবাতি ..(নাপাকি দূর করার উদ্দেশ্যে আমি গোসলের নিয়ত করিলাম) ”এ জাতীয় নিয়ত সম্পূর্ণ মানুষের মনগড়া। দ্বীনের সাথে তার ন্যূনতম সম্পর্ক নাই। তাই তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
তবে সকল ইবাদতের পূর্বে অন্তরে নিয়ত থাকা আবশ্যক। তদ্রূপ গোসলের পূর্বে অন্তরে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত থাকা আবশ্যক। নিয়ত ব্যতিরেকে কোন আমলই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না (সহীহুল বুখারির ১ম হাদিস)। নিয়ত অর্থ সুদৃঢ় ইচ্ছা বা সংকল্প। এটি সম্পূর্ণ মনের বিষয়। এটি মুখে উচ্চারণ করার (বাংলায় বা আরবিতে) প্রামাণিকতা ও যৌক্তিকতা কোনটাই নেই। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। —আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী