রাসুল (সাঃ) এর জীবনী
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম সাল
রাসুল সাঃ এর জীবনী বই
মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা
রাসুল (সাঃ) এর জন্ম
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবন কাহিনী
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী রচনা
হযরত মুহাম্মদ সাঃ রচনা
প্রাক-ইসলামী যুগে যখন চরম উচ্ছৃঙ্খলতা, পাপাচার, দুরাচার, ব্যাভিচার, মিথ্যা, হত্যা, লুন্ঠন, মদ্যপান, জুয়ায় ভরপুর ছিল। অন্যায়-অপরাধ, দ্বন্ধ-সংঘাত, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, নৈরাশ্য আর হাহাকার বিরাজ করছিল ঠিক এমন সময় মানবতার মুক্তির দিশারী সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সারা জাহানের হিদায়েতের জন্য আবির্ভূত হলেন। রাসুল (সাঃ) হলেন বিশ্ব মানতার জন্য আল্লাহর এক অনন্য রহমত স্বরুপ প্রেরিত। মহান বিশ্ব পরিচালক ঘোষণা করেনছেন, “আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি বিশ্ব জগতের জন্য বিশেষ রহমত স্বরুপ।”
জন্ম ও শৈশবঃ
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খৃীস্টাব্দে ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম আমিনা এবং পিতার নাম আব্দুল্লাহ। অতি অল্প বয়স থেকেই আল্লাহ তাকে কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে নেন। জন্মের পূর্বে পিতা, ৬ বছর বয়সে মা আমিনাকে হারান। এবং ৮ বছর বয়সে তার দাদা মৃত্যু বরণ করেন। ইয়াতীম শিশু বড় হয়ে উঠে চাচার সযত্ন ভালবাসায়।
নামকরণঃ
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হওয়ার পরই মা আমেনা এ সংবাদ দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে পাঠান। সংবাদ পাওয়ার পরেই তিনি ছুটে আসেন। পরম স্নেহে দেখেন, যত্নের সঙ্গেঁ কোলে নিয়ে কা’বার ভেতর প্রবেশ করেন, আল্লাহর হামদ বর্ণনা করেন এবং দোয়া করেন। অতঃপর তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’(প্রশংসিত)।
আহমদ নামকরণঃ
বিবি আমিনা গর্ভাবস্থায় স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত নাম অনুসারে ‘আহমদ’ (উচ্চ প্রশংসিত’) নাম রাখেন। বাল্যকাল হতে মুহাম্মদ ও আহমদ উভয় নামি প্রচলিত ছিল। উভয় নামই পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে।
দুগ্ধ পান কালঃ
সর্ব প্রথম তাঁকে তাঁর মাতা হযরত আমেনা দুগ্ধ পান করান। অতঃপর আবু লাহাবের বাঁদী ‘সুওয়াইবা’ তাকে দুগ্ধ পান করায়। অতঃপর ধাত্রীর সন্ধান করতে থাকেন। ‘হাওয়াযিন’ গোত্রের বানী সা’দ এর মহিলা হালীমা ছা’দিয়া এই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী হন। এমন ভাবে যে, অন্য কোন ধাত্রী শিশু মুহাম্মদকে গ্রহণ করলনা পক্ষান্তরে হালীমা সাদীয়াও অন্য কোন শিশু পেলনা। ফলে বাধ্য হয়ে রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম কে গ্রহণ করলেন। গ্রহণ করার পর থেকেই হালীমার ঘরে ইলাহী বরকতের জোয়ার শুরু হল। দুবছর দুগ্ধ পানের পর বিবি হালীমা শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে তাঁর মায়ের নিকট হাজির হন এবং সাথে সাথে এই আকাঙ্খাও ব্যক্ত করেন যে, শিশুকে আরো কিছু দিনের জন্য তাঁর নিকট যেন থাকতে দেয়া হয়। এদিকে মক্কায় তখন মহামারী চলছিল। উভয় দিক চিন্তা করে বিবি আমেনা তাঁর শিশুকে হালীমার নিকট ফিরিয়ে দেন। এমনি ভাবে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম বানী সাদে লালিত পালিত হন। সেখানে তিনি তাঁর দুধ ভাইদের সঙ্গে জঙ্গঁলে ছাগল চরাতেন। (সহীহ আল বুখারী, কিতাবুন নিকাহ, সীরাতুননবীঃ ১/১৭২)
দাদা ও চাচার তত্ত্বাবধানেঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর মাতা-পিতার মৃত্যুর পর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর লালন পালনের দায়িত্ব নেন। তিনি তাকে খুব স্নেহ করতেন। এমনকি নিজের ছেলেদের উপরও তাঁকে প্রাধান্য দিতেন। নিজের আসনে বসাতেন। দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তই তিনি তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিব তাঁর দায়িত্ব নেন। তখন তার বয়স ছিল আট বছর। তিনি চাচা আবু তালিবকে বকরী লালন-পালন ও শাম দেশের ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন।
খাদীজা (রাঃ) এর সঙ্গে বিবাহঃ
পঁচিশ বছর বয়সে মক্কার ধনবতী মহিলা খাদিজা বিনতে খোয়ালিদের সাথে রাসূল (সাঃ) এর বিয়ে হয়। অভিজাত সতী, ধনবতী, মহিলা খাদিজা বিভিন্ন লোককে পণ্য দিয়ে ব্যবসা করাতেন এবং তিনি লাভের একটা অংশ গ্রহণ করতেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সততা, সত্যবাদীতা ও বিশ্বস্ততা তখন সুবিদিত ছিল। আল-আমীন, আসসাকিন এর প্রশংসা শুনে তিনি তার কাছে ব্যবসার প্রস্তাব পাঠান। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রাজী হন এবং ব্যবসা শেষে অনেক বেশি লাভসহ তার সব কিছু বুঝিয়ে দেন।
রাসূলের গুণ মুগ্ধ ও অলৌকিক সংকেতের কথা শুনে মা খাদিজা বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় এবং উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তখন খাদিজার বয়স ছিল ৪০ বছর। যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন রাসূল (সা:) আর কোনো বিয়ের প্রয়োজন অনুভব করেননি। এরপর আদর্শিক প্রয়োজনে এবং নারী সমাজের বিভিন্ন উপকারের জন্য তিনি মোট ১১টি বিয়ে করেন। দু’জন তার মৃত্যুর পূর্বে মারা যান আর ৯ জনের সাথে তিনি বৈবাহিক জীবন অতিবাহিত করেন।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সাঃ)
মহা গ্রন্থ আল কোরআন, ইতিহাস এর যুক্তি-প্রমাণ এবং বিভিন্ন গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী রমজান মাসের শেষ পর্যায়ে মহানবী (সাঃ) এর কাছে আল্লাহর দূত জিবরাইল (আ:) কে দিয়ে ওহী (আল্লাহর বাণী) প্রেরন করেন। এ সময় তার বয়স ৪০ পূর্ণ হয়। প্রথমে তিনি স্বপ্নে সে নিদর্শন পান এবং পরে সরাসরি পেয়েছিলেন।
ওহী নাযিলের সূচনাঃ
বেশীর ভাগ সময় তিনি মক্কার প্রসিদ্ধ পাহাড় ‘জাবালে নূরে’ অবস্থিত ‘গারে হেরা’ তথা হেরা গুহায় অবস্থান করতেন এবং ক্রমান্বয়ে কয়েক রাত সেখানে অতিবাহিত করতেন। থাকার ব্যবস্থাও তিনি আগে থেকেই করে নিতেন। এভাবে একদা তিনি হেরা গুহায় তাশরীফ আনেন এমন সময় তাঁকে নুবুওয়াতের পদমর্যাদা দিয়ে সৌভাগ্যবান করার পবিত্র মুহুর্ত এসে যায়। জন্মের ৪১ তম বছরে ২৭ ই রজব (হিজরতের ১৩ বছর পূর্বে) মুতাবিক ৬১০ খৃষ্টাব্দ তারিখে জাগ্রত ও চৈতন্য অবস্থায় এঘটনা সংঘটিত হয়। আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) প্রথমবারের মত তাঁর কাছে, পৃথিবীবাসীদের জন্য আল্লাহর সর্বশেষ ঐষীবাণী, বিশ্বমানবতার মুক্তির পথের দিশারী, জ্বিন ও ইনসানের জন্য পরিপূর্ণ জীবন বিধান ‘আল্ কুরআনুল কারীম’ এর সর্বপ্রথম কথাগুলো নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন।
“পড় তোমার প্রতিপালকের নামে
তাঁর সামনে হেরা গুহায় ফেরেশতা আগমন করেন এবং বলেনঃ পড়ুন। তিনি উত্তর দিলেন আমি কি ভাবে পড়ব? ফেরেশতা বললেনঃ
পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে, তোমার পালনকর্তা মহা দয়ালু।
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না”। (সূরা আলাকঃ ১-৫।)
মি‘রাজ তথা উর্দ্ধারোহনঃ
রাসূলুল্লাহ (সঃ) -এর বয়স যখন ৫১ বছর নয় মাস হয়, তখন তাঁকে সশরীরে মর্যাদাপূর্ণ ইসরা ও মি’রাজ ভ্রমণের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়। মি’রাজে রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রথমে কা’বা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসে যান, অতঃপর সেখান থেকে এক এক করে সাত আসমান অতিক্রম করে মহান আল্লাহর আরশে আজীমে তাশরীফ গ্রহণ করেন। এ মি’রাজ সফরে রাসুলুল্লাহ (সঃ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে বিধান লাভ করেন। মি’রাজে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) জান্নাত এবং জাহান্নাম স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন।
দাওয়াতের আদেশঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইসলামের দাওয়াতের আদেশ দিয়ে ইরশাদ করেন,
يَاأَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ ﴿১﴾ قُمْ فَأَنْذِرْ ﴿২﴾ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ ﴿৩﴾ . (سورة المدثر)
হে চাদরাবৃত ব্যক্তি! ওঠ এবং সতর্ক কর।
গোপনে ইসলামের দাওয়াতঃ
রাসলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ যথাযথ পালন করেন এবং গোপনে মানুষের মাঝে ইসলাম প্রচার করতে শুরু করেন। তিনি সর্বপ্রথম আপন পরিবার- পরিজন ও বন্ধু-বর্গকে ইসলামের দাওয়াত দেন। সর্বপ্রথম খাদীজা রা. তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করেন। পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম আবূ বকর সিদ্দীক (রা), ছোটদের মধ্যে আলী ইবনে আবূ তালিব রা. এবং ক্রীতদাসদের মধ্যে যায়েদ ইবনে হারেসা রা. ইসলাম গ্রহণ করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন বছর পর্যন্ত গোপনে তার নিকটস্থ’ লোকদের মাঝে ইসলাম প্রচার করেন।
প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াতঃ
তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেয়ার পর মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন। নবী (সাঃ) সাফা পর্বতের ওপর দাড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রাসূল। এই সময় থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়।
ধৈর্য ও অবিচলঃ
মুসলমানগণ মুশরিকদের সকল নির্যাতন ও নিপীড়ন ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করতেন। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সাওয়াব ও জান্নাত লাভের আশায় বিপদে ধৈর্য ধারণ ও অনড় থাকার পরামর্শ দেন। মুশরিকদের নির্যাতন ভোগ করেছেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সাহাবী হলেন : বিলাল ইবনে রাবাহ ও আম্মার ইবনে ইয়াসির রা. প্রমুখ। মুশরিকদের নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ইয়াসির ও সুমাইয়া রা. এবং ইসলামের ইতিহাসে তারাই সর্বপ্রথম শহীদ।
আল-আমীন উপাধি লাভঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বাল্যকাল হতেই চিন্তামগ্ন থাকতেন। তিনি ছিলেন দুর্দশাগ্রস্থ ও নিপিড়ীত মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল। আরববাসী তার নম্রতা, বিনয়, সত্যবাদিতা ও সৎস্বভাবের জন্য তাঁকে ‘আল-আমীন’ বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করেন।
তায়েফ গমনঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আশ্রয়দাতা চাচা আবূ তালিবের মৃত্যুকে কুরাইশরা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করল। তার উপর নির্যাতনের মাত্রা পূর্বের চেয়ে অনেক বাড়িয়ে দিল। এ কঠিন পরিস্থিতে সহযোগিতা ও আশ্রয় পাওয়ার আশায় তিনি তায়েফ গমন করলেন। কিন্ত সেখানে উপহাস ও দুর্ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই পেলেন না। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পাথর নিক্ষেপ করে আহত করে। ফলে তিনি আবার মক্কায় ফিরে যান।
মদিনায় হিজরতঃ
কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয় এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাযত করেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) স্বীয় ঘর থেকে বের হন এবং আল্লাহ তাআলা কাফেরদের চক্ষু অন্ধ করে দেন যাতে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে না পারে। তিনি চলতে চলতে মক্কার বাইরে আবু বকর সিদ্দীক রা. এর সাথে মিলিত হন। অতঃপর তারা এক সাথেই পথ চলা আরম্ভ করেন। সওর নামক পাহাড়ে পৌঁছে একটি গুহায় তিন দিন পর্যন্ত আত্মগোপন করেন। এ সময়টিতে আব্দুল্লাহ বিন আবূ বকর রা. তাদের নিকট কুরাইশদের সংবাদ পৌঁছাতেন এবং তার বোন আসমা খাদ্য ও পানীয় পৌঁছে দিতেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সঙ্গী আবু বকর (রা) গুহা হতে বের হন এবং মদীনার পথে যাত্রা শুরু করেন।
মদীনায় নতুন অধ্যায়ের সূচনাঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় পৌঁছে তাকওয়ার ভিত্তিতে ইসলামের সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমানে মদীনা শরীফে এ মসজিদটি “মসজিদে কু’বা” নামে পরিচিত।
মদীনাতে রাসুল (স) সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা হলো মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন।
মক্কা বিজয়ঃ
হুদায়বিয়ার সন্ধির পর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিভিন্ন গোত্রে তাঁর দাওয়াতী কর্মসূচী অধিক পরিমাণে বিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হন। ফলে এক বছরের মাথায় মুসলমানদের সংখ্যা অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মাঝে কুরাইশদের সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ বনু বকর মুসলমানদের মিত্র কবীলায়ে খুযা‘আর উপর আক্রমণ করল। এর অর্থ দাঁড়াল কুরাইশ এবং তার মিত্ররা হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করল।
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সংবাদ পেয়ে অত্যধিক ক্রুদ্ধ হন এবং মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে দশ হাজার যোদ্ধার একটি বিশাল সেনাদল গঠন করেন।
তখন ছিল হিজরী অষ্টম বর্ষের রমযান মাস। এদিকে কুরাইশরা নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কাভিমুখে অভিযানের সংবাদ পেয়ে তাদের নেতা ও মুখপাত্র আবূ সুফিয়ানকে ক্ষমা প্রার্থনা, সন্ধি চুক্তি বলবৎ এবং চুক্তির মেয়াদ আরো বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট প্রেরণ করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দিলেন। কারণ তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। আবূ সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ ব্যতিত আর কোন উপায় না দেখে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর সেনাদল (মক্কাভিমুখে) রওয়ানা হয়ে মক্কার কাছাকাছি আসলে মক্কাবাসী বিশাল দল দেখে আত্মসমর্পণ করে। আর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের সঙ্গে নিয়ে বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেন এবং নিজ হাতের লাঠি দ্বারা কা‘বার আশেপাশে রাখা সকল প্রতিমা ভেঙে চুরমার করে দেন। আর স্বীয় রবের শেখানো আয়াত পাঠ করতে থাকেন,
وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا-
“বল, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।” (সূরা ইসরা : ৮১)
অতঃপর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ঘোষণা করেন মক্কা পবিত্র ও নিরাপদ।
বিদায় হজ্জঃ
দশম হিজরী সনে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে তাঁর সাথে হজব্রত পালন ও হজের আহকাম শিক্ষা গ্রহণ করতে মক্কায় যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
قول الله تعالى : الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا (سورة المائدة : ৩)
তাঁর আহ্বানে এক লক্ষের মত লোক সাড়া দিল। তাঁরা যুলকা’দাহ্ মাসের পঁচিশ তারিখ তাঁর সাথে মক্কা পানে বের হন। বাইতুল্লায় পৌঁছে প্রথমে তওয়াফ করেন। অতঃপর যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এরপর নয় তারিখ জাবালে আরাফাহ অভিমুখে যাত্রা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে অবস্থান করেন এবং মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তার ঐতিহাসিক অমর ভাষণ দান করে তাদেরকে ইসলামী বিধি-বিধান ও হজের আহকাম শিক্ষা দেন এবং আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণী তিলাওয়াত করেন- “আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।”
বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালের সফর মাসে মুহাম্মদ (স) জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচন্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির ওপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রাঃ)এর কামরায় অবস্থান করতে থাকেন। তাঁর কাছে সাত কিংবা আট দিনার ছিল,মৃত্যুর একদিন পূর্বে তিনি এগুলোও দান করে দেন। অবশেষে ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১ তারিখ সন্ধ্যায় তিনি মহান প্রতিপালকের সান্নিধ্যে চলে যান। এ সময় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
সর্বোপরি, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্টায় এক অনন্য নজির স্থাপন করেন, সর্বক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সফল ব্যক্তিত্ব।
ঐতিহাসিক গিবনের ভাষায়,
If all the world was united under one leader, Muhammad would have been the best fitted man to lead the peoples of various creeds, dogmas and ideas to peace and happiness.
“সমগ্র দুনিয়াটাকে যদি একত্র করে একজনের নেতৃত্বে আনা যেত তাহলে নানা ধর্মমত, ধর্ম বিশ্বাস ও চিন্তার মানুষকে শান্তি সুখের পথে পরিচালনার জন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-ই হবেন সর্বোত্তম যোগ্য নেতা।”
সামান্য এই লিখাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনি শেষ করা সম্ভব নয়। পরবর্তীতে শ্যাডো নিউজে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী নিয়ে ধাপে ধাপে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।