Technology | প্রযুক্তিপ্রযুক্তি

বোমা খুঁজে দেবে মৌমাছি

Rate this post

সেনাবাহিনীর সঙ্গে থাকা কুকুর যেভাবে গন্ধ শুঁকে বোমা অনুসন্ধান করতে পারে, ঠিক সেভাবেই মৌমাছিরাও নিজেদের শক্তিশালী ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করে বোমা খুঁজে বের করতে পারে। প্রাণীজগতের অন্যতম ছোট পতঙ্গ মৌমাছি। তবে এদের ঘ্রাণশক্তি এতটাই শক্তিশালী যে, প্রায় ৪.৫ কিলোমিটার দূর থেকে টিএনটি বা ট্রাইনাইট্রোটলুইন শনাক্ত করতে পারে। মৌমাছির ১৭০টির মতো ঘ্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমতাই কাজে লাগিয়েছে ক্রোয়েশিয়ার বিজ্ঞানীরা।

নব্বইয়ের দশকে ঘটে যাওয়া বসনিয়ার যুদ্ধে লুকিয়ে রাখা ল্যান্ডমাইন শনাক্তে মৌমাছি কতটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিয়ে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছে গবেষকদলটি। ক্রোয়েশিয়ার এই গবেষকদল দীর্ঘদিন ধরে মাইন শনাক্ত করার জন্য মৌমাছিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করে আসছে। আর তাদের চেষ্টা বর্তমানে দেখেছে আলোর মুখ।

কিন্তু সব কিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে। কয়েক শ বা কয়েক হাজার মৌমাছিকে মাইন শনাক্তের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব, কিন্তু লাখ লাখ মৌমাছিকে কিভাবে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা যায়? মূলত মাইন শনাক্তকরণে প্রশিক্ষিত মৌমাছি নিজেরাই প্রাকৃতিকভাবে অন্য মৌমাছিদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে। এসব প্রশিক্ষিত মৌমাছিদের এখন বলা হচ্ছে ‘প্রাকৃতিক সেনাবাহিনী’।

এই প্রাকৃতিক সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে মানব সেনাবাহিনীর মতো করেই। মৌমাছিদের প্রশিক্ষণের সময় তাদের খাবারের সঙ্গে খুব কম পরিমাণ টিএনটি বা ট্রাইনাইট্রোটলুইন মিশিয়ে দেওয়া হয়। ট্রাইনাইট্রোটলুইন হলুদ বর্ণের এক ধরনের বিস্ফোরক পদার্থ, যা মূলত ল্যান্ডমাইন, হ্যান্ড গ্রেনেড ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। এর অণুতে অক্সিজেনের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি থাকায় সামান্য আঘাতেই এটির অভ্যন্তরে দহন বিক্রিয়া ঘটে এবং বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়।

দীর্ঘদিন ট্রাইনাইট্রোটলুইন মেশানো খাবার গ্রহণের কারণে ট্রাইনাইট্রোটলুইনের গন্ধকেই খাবারের গন্ধ হিসেবে ধরে নেয় মৌমাছি। আর যেখানে এর গন্ধ পায়, সেখানেই ঘুর ঘুর করতে থাকে। মৌমাছি যখন ট্রাইনাইট্রোটলুইনের গন্ধের সঙ্গে খাবারের গন্ধ মিলিয়ে ফেলে তখনই ধরে নেওয়া হয় মৌমাছিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ সফল হয়েছে।

এরপর মৌমাছিদের ছেড়ে দেওয়া হয় সম্ভাব্য মাইন থাকতে পারে এ রকম এলাকায়। খাবারের সঙ্গে ট্রাইনাইট্রোটলুইন মিশিয়ে দেওয়ার কারণে মৌমাছি যখন পরবর্তী সময়ে সেসব এলাকায় খাবারের অনুসন্ধান করা শুরু করে, তখন ট্রাইনাইট্রোটলুইনের গন্ধের দিকে বেশি নজর থাকে তাদের। এমনিতেই মৌমাছি যেকোনো গন্ধের প্রতি প্রচণ্ড সংবেদনশীল হয়। ল্যান্ডমাইন যেহেতু ট্রাইনাইট্রোটলুইন রাসায়নিক ব্যবহার করে বানানো, ফলে মৌমাছির এই সংবেদনশীলতার কারণে ল্যান্ডমাইনের আশপাশে খাবারের খোঁজ করতে থাকে, যা পর্যবেক্ষণ করে একটি ড্রোন।

ড্রোনের পাঠানো ছবির সাহায্য আর গাণিতিক এলগারিদম দুটির সমন্বয়ে মাইনের অবস্থান শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। আর এই পদ্ধতিতে তাঁরা প্রায় ৮০ শতাংশের ওপরে সফল। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন মৌমাছি আর ড্রোনের মিলিত চেষ্টায় বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় থাকা সক্রিয় স্থলবোমাগুলো দ্রুত নিষ্ক্রিয় করা যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button