বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : দেশে প্রতিদিন নিবন্ধন করা নতুন মোবাইল হ্যান্ডসেটের প্রায় ১০ শতাংশই অবৈধ ও নকল বলে ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এখন দিনে এক লাখ ১০ হাজার নতুন মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন হচ্ছে।
হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন গ্রাহকের হাতে আসা ১১ হাজার অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট চিহ্নিত হচ্ছে। এসব হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়া মাত্র গ্রাহকের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা চলে যাচ্ছে যে, তার সেটটি ‘অবৈধ বা নকল’।
১ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকরা এগুলো ব্যবহারে ছাড় পেলেও ১ অক্টোবর থেকে অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট বন্ধের প্রক্রিয়ায় যেতে কমিশনের কঠোর অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।
যে ১০ শতাংশ হ্যান্ডসেট নকল বা অবৈধ বলে চিহ্নিত হচ্ছে-সেগুলোকে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল আলম বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশে নকল ও অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানি ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিবন্ধনের এই প্রক্রিয়া চালু করেছে। কমিশনের ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার-এনইআইআর-এর মাধ্যমে এ কার্যক্রম চলছে। নিবন্ধনের এ কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই বিপুল সংখ্যক অবৈধ ও নকল সেট ধরা পড়ার অবাক করা এ তথ্য মিলছে।
গত ১ জুলাই থেকে এনইআইআর-এর কার্যক্রম শুরুর পর ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩০ কোটি ৬৬ লাখ এক হাজার হ্যান্ডসেট নিবন্ধন হয়েছে।
এর মধ্যে ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্কে থাকা ৩০ কোটি হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়।
মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীরা এতে বেশ খুশি, কেননা তারা এর সুফল পেতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, এ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বৈধ হ্যান্ডসেটের বিক্রি বেড়েছে।
স্পেকট্রাম বিভাগের ডিজি শহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে চালু হয়েছে, তার সবই নিবন্ধনে আনা হয়েছে।
এনইআইআর কার্যক্রম শুরুর পর প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ১০ হাজার হ্যান্ডসেট নিবন্ধন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব হ্যান্ডসেটের আনুমানিক ১০ শতাংশ অবৈধ ও নকল। আর নেটওয়ার্কে অ্যাকটিভ হওয়ার পর সাথে সাথে গ্রাহকদের এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। নেটওয়ার্কে আসার দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে তারা জানতে পারছেন যে তাদের সেটটি বৈধ না অবৈধ।
অবৈধ সেট বন্ধের প্রক্রিয়া ১ অক্টোবর থেকে পুরোপুরি শুরু হচ্ছে জানিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, অক্টোবর ১ তারিখ থেকে কোনো নমনীয়তা থাকবে না, ১ অক্টোবর থেকে অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে সচল থাকতে পারবে না।
হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিএমপিআইএ-এর যুগ্ম সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এনইআইআর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি কমছে। কারণ আমরা দেখছি নতুন সেটগুলোর চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হলে আরো সুফল পাওয়া যাবে বলে তার প্রত্যাশা।
গত ১ জুলাই অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট বন্ধে এনইআইআর কার্যক্রম শুরু করে বিটিআরসি। এ প্রক্রিয়ায় ১ জুলাই থেকে যেসব নতুন হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, সেগুলোর মধ্যে কোনোটি অবৈধ হয়ে থাকলে গ্রাহককে তা জানিয়ে তিন মাস সময় দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
পরীক্ষামূলকভাবে তিন মাস ওই সেট নেটওয়ার্কে সচল রেখে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আগেই জানিয়েছিল বিটিআরসি।
কমিশন বলছে, হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের এই প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় এখন থেকে কারো মোবাইল ফোন চুরি বা হারিয়ে গেলে খুব সহজেই তা উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
অবৈধ মোবাইল সেট বন্ধ করা এবং বৈধ সেটের নিবন্ধনে ডিসেম্বরে বিটিআরসির সঙ্গে চুক্তি করে দেশি কোম্পানি সিনেসিস আইটি। চুক্তি অনুযায়ী জুলাইয়ের মধ্যেই তারা এনইআইআর সিস্টেম চালু করে।