গল্পঃ দেনাপাওনা

মধুমিতার বিষয়ে সমস্ত খোঁজ খবর নিয়ে পাত্রপক্ষের লোকজন পাত্রীকে দেখতে এলো। মধুমিতাকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তাদের সামনে এনে বসানো হলো। পাত্রপক্ষের প্রশ্ন আরম্ভ হলো…..

-‘মা,তুমি কতদূর পড়াশোনা করেছো ☺️

-‘বাংলায় গ্র‍্যাজুয়েট।’

-‘শুনেছি চাকরিও নাকি করা হয়!’

-‘হ্যাঁ ব্যাঙ্কে।’

-‘রান্না বান্না জানো 🙂

-‘হ্যাঁ,সবই জানি।মার থেকে শিখেছি।’

-‘গান জানো?’

-‘হ্যাঁ,জানি।’

-‘একটু হেঁটে দেখাও তো।’

মধুমিতা একবার মা, বাবার দিকে তাকিয়ে ওনাদের কথা মত হেঁটে দেখালো। কোনো খুঁত নেই,ওনারা বললেন।

-‘আচ্ছা বেশ,বসো।একটা ছোটো করে

গান শোনাও তো।’ ☺️

মধুমিতা সুরেই গান গাইলো। না এতেও কোনো খুঁত নেই!

পাত্রপক্ষের সবাই হাসি মুখেই বলল…

‘- এবারে ভেতরে যাও মা।’

পাত্রপক্ষ লুচি, মাংস, মিষ্টি চা জল ইত্যাদি নানারকম খাতির যত্ন,আপ্পায়ন পেয়ে বেশ খুশি হলো। তারা বিয়ের সম্মতি না দিয়ে বলে গেলেন বাড়িতে গিয়ে জানাবে। 🤗

পাত্রপক্ষ চলে যেতে মধুমিতা বাবাকে বলে… বাবা আজ আমি চাকরি করছি। আমার যদি এই অবস্থা হয়,তবে আমাদের সমাজে চাকরি না করা মেয়েদের কি অবস্থা বুঝতে পারছ?😒 আমি ওই বাড়িতে বিয়ে করতে পারব না। যত সব মান্ধাতা আমলের চিন্তা ভাবনা বলে কিনা “একটু হেঁটে দেখাও তো” মুখটা ভেঙ্গিয়ে বলে মধুমিতা, আমি বলে দিচ্ছি বাবা হয় এর যোগ্য জবাব তুমি দেবে। নয়তো পত্রপাঠ জানিয়ে দাও আমরা এই বিয়েতে রাজি ন‌ই। শুধু তোমার জন্য আজ আমি শান্ত ভাবে বসেছিলাম।

মধুমিতার বাবা বললেন মা আমি এর যোগ্য জবাব দেব। তুই চিন্তা করিস না।

রাতে পাত্রপক্ষের ফোন এলো।

পাত্রের বাবা বললেন…

‘দেখুন,মেয়েতো ভালোই।মানে বেশ গুনবতী।কিন্তু,সমস্যাটা হলো ওর গায়ের রঙটা একটু যা ময়লা। তবে ওসব নিয়ে ভাববেন না।আমরা রাজি।কবে আপনারা আসছেন?

মধুমিতার বাবা বলে উঠলেন শুভস্য শীঘ্রম আমরা এই রবিবারেই আসছি।

রবিবারে মধুমিতার বাবা দুই ভাই ও জামাই নিয়ে যথারীতি হাজির। প্রথমেই চা, জলখাবার আসে। প্রাথমিক ডান হাতের কাজ শেষ করে মধুমিতার বাবা বলেন…

দাদা, জামাই বাবাজী কে একটু ডাকুন কথা বলি। “হ্যাঁ” “হ্যাঁ” অবশ্যই এই শুনছো খোকা কে একটু ডেকে দাও।

খোকা এসে নমস্কার জানিয়ে সামনে চেয়ার টেনে বসে। মধুমিতার বাবা শুরু করে….

-‘তা বাবা কোথায় চাকরি করা হয়?’

-‘রামতলার প্রেসে।’

-‘কত বছর কাজ করা হচ্ছে বাবা?’

-‘চারবছর।’

-‘কত মাইনে?’

-‘পনেরো হাজার।’

– মধুমিতার বাবা মনে মনে হিসাব করে ,

আমার মেয়ের তিনভাগের একভাগ।

-‘কিছু বললেন?’

-‘না না বাবা,বলছি কাজের লোক আছে তো ঘরে?ঘর মোছার,বাসন মাজার!’

-‘হ্যাঁ’

-‘রাতে রুটি না ভাত,কোনটা চলে?’

-‘কেন?’

-‘না মানে মেয়ে রাতে রুটি খায় তো!’

-‘রুটি।’

-‘তা বেশ, ঘরে আ্যটাচড বাথরুম আছে?’

-‘আছে!’

-‘আ্যলকোহল বা সিগারেটের নেশা নেইতো?’

-(বিরক্ত হয়ে) ‘না নেই।’

-‘থ্যালাসেমিয়া,এইডসের টেষ্ট করা আছে?’

-‘না নেই।(বিরক্ত হয়ে) এবার আমি উঠব।’

-‘হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা এবার তুমি ওঠো। তবে যাওয়ার আগে তুমি সামনে দিয়ে একটু হেঁটে যাও তো বাবা!’

-‘এ আপনি কি বলছেন?’

-‘তা বাবা আমি দেখবো না আমার জামাই খোঁড়া কিনা!’

-‘রাগে গজগজ করতে করতে ছেলে চলে গেল সামনে দিয়ে হেঁটে।’

– মধুমিতার বাবা এবার ছেলের বাবাকে বলে, দাদা আপনি বসুন। বলেই বলল…. -‘তা দাদা আপনার খাট আলমারির ডিমান্ড আছে নাকি? নাকি ছেলে এখন মেঝেতে শোয়! শশুরের অপেক্ষায় আছে!’

-‘না না ডিমান্ড নেই…. তবে বিয়েতে এসব তো দিয়েই থা’…

-‘বাড়িতে শাড়ি, ঘোমটার সেইরকম কোন বাধ্যবাধকতা নেই তো?’

-‘না না সেরকম কিছু’….

-‘ননদ কিরকম? মুখরা নয় তো?’

-‘না মেয়েও আমার একটাই, পাশের গ্রামে বিয়ে দিয়েছি।’

-‘ভালবাসার বিয়ে না দেখেশুনে?’

-‘দেখেশুনেই দিয়েছি।’

-‘মেয়ে কি বাপের বাড়ি ঘন ঘন যাতায়াত করে ? 😜

-‘না না মাঝে মধ্যে আসে।’

-‘দিদি অর্থাৎ আপনার স্ত্রী কিরকম? মুখরা নয় তো ? 😜

-‘দাদা আপনি এসব কি জিজ্ঞাসা করছেন কিছুই বুঝতে পারছি না!’ 😐

-‘আরে বাবা মেয়ে দিতে যাচ্ছি আপনার বাড়িতে সব দেখেশুনে নিতে হবে না!’

☺️ আচ্ছা দাদা এবার আমরা উঠি? বাড়ি গিয়ে ফোন করে জানাব।বলে মধুমিতার বাবা উঠে পড়ে।

সারা রাস্তাটা মনে মনে হাসতে হাসতে ভাবে কেমন শিক্ষা দিলাম! মেয়েদেরকে বলা “একটু হেঁটে দেখাও তো”। মধুমিতার বাবার মুখে চ‌ওড়া হাসি। 😂😂

রাস্তা যেন আর ফুরোতে চায় না। 😅

কখন গিয়ে মেয়েকে সব বলবে মুখিয়ে থাকে সে।

দেনাপাওনা উপন্যাস pdf
দেনাপাওনা গল্পের নামকরণ
রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ গল্প
দেনা পাওনা গল্পের নামকরণের সার্থকতা
দেনাপাওনা গল্পের লেখক কে
দেনাপাওনা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
দেনা পাওনা গল্পের নাট্যরূপ pdf
দেনা পাওনা প্রশ্ন উত্তর

সময় করে গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ..♥♥♥♥

😅🤩(সংগৃহীত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *