বাংলাদেশের মত দেশ যেখানে চাকরির বাজার বেশ নাজুক অবস্থায় আছে, যেখানে ৪৭% শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেকার, পর্যাপ্ত চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হয় না, সেখানে বিকল্প পেশা হিসেবে সম্মানজনক অবস্থায় আছে ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্তপেশা, বা আরও
বিস্তরভাবে বলতে গেলে অনলাইন প্রফেশন। অনেক গুলো অনলাইন প্রফেশনের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং একটি।
ফ্রিল্যান্সিং খাতে বাংলাদেশ বেশ ভাল অবস্থানে আছে, বিশ্বে বাংলাদেশের দক্ষ পেশাদারদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে শত কোটি টাকার। হিসেব মতে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সার আছে ৫ লক্ষাধিক।
ফ্রিল্যান্সিং যেমন সম্ভাবনা, তেমনি এ নিয়ে আছে প্রচুর ভুল ধারণা, আবার ভুল ধারণাকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতারণার ফাঁদ। এ সব নিয়েই আলোচনা হবে এই লেখাতে।
ফ্রিল্যান্সিং হল কোন প্রতিষ্ঠানে পার্মানেন্ট চুক্তিবদ্ধ না হয়ে বরং প্রজেক্ট বেসিসে কাজ করা। ফ্রিল্যান্সিং করে আসছে মানুষ শত বছর ধরে। যেমন একজন রিক্সাওয়ালাও ফ্রিল্যান্সার, কারণ সে অন্যের রিক্সা চালায়, ইচ্ছা হলে প্যাসেঞ্জার নেয়, নাহলে নেয় না। তার ফ্রিডম আছে। ইদানিং ফটোগ্রাফাররাও ফ্রিল্যান্সার, কারণ তারা কোথাও ফটোগ্রাফার হিসাবে চাকরি না করে বরং অনুষ্ঠান বেসিসে শুট করে আর পারিশ্রমিক নেয়।
সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজ নয়, কাজ করার ধরণ মাত্র।
অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মানে হল, যে কাজ ক্লায়েন্ট অনলাইনের মাধ্যমে আপনাকে দিবে, আপনি সে কাজে চুক্তিবদ্ধ হবেন, নিজের দক্ষতা দিয়ে কাজটা করবেন, আর সেটা অনলাইনের মাধ্যমেই ক্লায়েন্টকে ডেলিভার করবেন, আর ক্লায়েন্ট অনলাইনের মাধ্যমেই আপনাকে পেমেন্ট করবে। এখানে অনলাইনে কাজ করেননি, কাজ আপনার দক্ষতা দিয়েই করেছেন, শুধু মাধ্যমটা অনলাইন, যোগাযোগের মাধ্যম। যেমন ফোনে কোন কাজের ডিল হলে নিশ্চয় আপনি এটাকে ফোনে আয় করা বলেন না, তেমনি এটাও অনলাইনে ইনকাম নয়।
এখন একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই ফ্রিল্যান্সার, ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সার, আউটসোর্সিং কি।
ধরুন আপনি ভাল একাউন্টিং করেন। আমেরিকার এক ক্লায়েন্টের কোম্পানির ১৫ দিনের একাউন্ট অডিট করতে হবে। সে অনলাইনে একটা প্ল্যাটফর্মে অফার করল। অনেকের মত আপনি অ্যাপ্লাই করলেন। আপনি কাজটা পেলেন। একটা এমাউন্ট পেমেন্টে চুক্তিবদ্ধ হলেন। কাজটা আপনি আপনার দক্ষতা দিয়ে সম্পন্ন করলেন, অনালাইনের মাধ্যমে আপনি সেটা ডেলিভার করলেন, ক্লায়েন্ট আপনাকে পেমেন্ট অনলাইনের মাধ্যমে দিল।
তাহলে,
ফ্রিল্যান্স কাজ কে করল? আপনি!
ফ্রিল্যান্সার কে? আপনি!
ফ্রিল্যান্সিং কে করল? আপনি!
আউটসোর্স কে করল? ক্লায়েন্ট!
আউটসোর্সার কে? ক্লায়েন্ট
আউটসোর্সিং কে করল? ক্লায়েন্ট!
অর্থাৎ আপনি কখনই আউটসোর্সিং করছেন না। সেটা করছে ক্লায়েন্ট! কেউ যদি ক্লেইম করে সে আউটসোর্সিং শেখাবে, তাকে প্রতারক বলে গণ্য করুন, কারণ সে নিজেই জানে না আউটসোর্সিং কি। সে প্রতারণা করছে। যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং কোনো কাজ না, কেউ যদি ক্লেইম করে সে ফ্রিল্যান্সিং শেখাবে, সে ক্ষেত্রে সে-ও প্রতারক।
যে খাতই বেশ ভাল করছে, সে খাতের নাম ব্যবহার করে কিছু প্রতারক প্রতারণা করা শুরু করে।
ফটোশপের দক্ষতায় মুগ্ধ কর সবাইকে!
ফটোশপের জগতটা খুব ইন্টারেস্টিং। একটি ছবি থেকে কতোকিছু যে করা যায় ফটোশপের সাহায্যে!
অদ্ভুত এই ছবি এডিটিংয়ের জগতে ঘুরে এসো প্লেলিস্টটি দেখে!
তেমনি এখন বেশ জমজমাট আউটসোর্সিং-ফ্রিল্যান্সিং এর নামে ট্রেইনিং প্রতারণা। বেশিরভাগ ট্রেনিং সেন্টার গুগল-ইউটিউব বা অন্যান্য ভাল মেন্টরের লেখা পড়ে মুখস্থ করে সেটা শেখানোর জন্য ট্রেনিং খুলে বসে।
একটু ভাবুন, আপনাকে সফল হওয়ার মেন্টরশিপ সে-ই দিতে পারবে, যে ঐ কাজে নিজে সফল। কিন্তু যে নিজেই কাজ করেনা বা করেনি, সে কি করে আপনাকে ট্রেইনিং দিতে পারবে?
আর যে দক্ষ, যে নিজে সফল, অনেক টাকা আয় করে, অনেক রেপুটেশন, সে কেন ট্রেনিং ব্যবসা করে ৫-১০ হাজার ইনকাম করতে আসবে? সে আরেকজনকে সফল করার মূল-মন্ত্র দিতে পারলে সে নিজে তো লক্ষ-লক্ষ আয় করার কথা। তার এত সময় কোথায়?
এসব ট্রেনিং সেন্টারের মালিক / ট্রেইনারদের ব্যাকগ্রাউন্ড খোঁজ নিলে দেখবেন, তারা নিজেরা অন্য ট্রেনিং সেন্টারে কোর্স করেছিল, নিজেরা ঐ কাজে দক্ষ হতে পারেনি, সফল হতে পারেনি। তো কি করবে? যা শিখেছে তা অন্যকে শিখিয়ে অনেক টাকা ইনকাম করা যায়, আর ট্রেনিং করার জন্য অর্থলোভী মানুষের তো দেশে অভাব নেই।
ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় যে গুণটা দরকার, তা হল নিজ থেকে বুঝে নেয়ার ক্ষমতা!
আর খেয়াল করলে দেখবেন, এসব ট্রেনিং সেন্টারে ফ্রিল্যান্সিং বলে SEO কে বুঝানো হয়। কিন্তু একজন এক্সপার্ট এসিও প্রফেশনাল বলতে পারবেন এই ট্রেইনিং এ SEO এর ১০% ও শেখানো হয়না। কারণ ট্রেইনাররা ডাউনলোড করা কোর্স থেকে শেখায়, যা কিনা কয়েক বছর আগেই আউটডেটেড। আর এই খাতে প্রতিদিন নতুন আপডেট আসছে।
আবার সম্পূর্ণ SEO এর কাজ পুরো মার্কেটের কাজের ১% এর চেয়ে কম। তার মানে আরও ৯৯% কাজ আছে, যেগুলোতে বাংলাদেশি মানুষ নেই বললেই চলে।
একবার ভাবুন, ১% কাজ ধরলাম ১০ হাজার জব। কিন্তু অলিতে গলিতে ট্রেইনিং সেন্টাররা SEO ই শেখায়। সে হিসাবে SEO শেখা মানুষ লাখের উপরে। তার মানে এ খাতেও বেকারত্ব দেখা যাবে।
অন্যদিকে এন্ড্রয়েড ডেভেলপমেন্ট, গেইম ডেভেলপমেন্ট, থ্রিডি, অটোক্যাড, এনিমেশন, ডেটা সাইন্স এরকম কাজ গুলোতে এদেশের খুব কমই স্কিল্ড আছে। এই খাতে কম্পিটিশনও কম। ডিমান্ডিং কাজ গুলোর একটা স্টাডি কমেন্টে দিচ্ছি।
সহজেই শিখে ফেলো মার্কেটিং-এর খুঁটিনাটি!!
ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মার্কেটিং-এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা অত্যন্ত জরুরি।
তাই ১০ মিনিট স্কুল তোমাদের সকলের জন্য নিয়ে এসেছে মার্কেটিং-এর উপর এক্সক্লুসিভ এই প্লে-লিস্ট!
বলে রাখা ভাল, ফেসবুক গ্রুপ, ব্লগ, ইউটিউব এবং অনেক ক্ষেত্রে ফ্রি ট্রেনিং এর মাধ্যমে অনেক সফল ব্যক্তিরাই ফ্রি-মেন্টরিং করছে বাংলাদেশে। 10 Minute School এ অনেক বিষয়ে ফ্রি কোর্স আছে, যা শিখে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিশ্ব বাজারে কাজ করা যাবে।
আরেকদল আরও এক ধাপ এগিয়ে। তারা অবৈধ-সাইবারক্রাইমকে ফ্রিল্যান্সিং বলে চালিয়ে দেয়, আর এ সম্পর্কে জানেনা এমন ছেলেমেয়েদের কাজ করায় তাদের প্রতিষ্ঠানে।
CAPTCHA এন্ট্রি, ফেসবুক ফেইক লাইক, পিটিসি (Clicksense, trafficmonsoon), আর এখন নতুন যুক্ত হয়েছে Bet365.
এগুলো পিওর সাইবারক্রাইম এবং অবৈধ। এগুলোর সাথে ফ্রিল্যান্সিং এর কোন যোগসূত্র নেই। বছর কয়েক আগে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং এর নামে এসব অবৈধ কাজ হচ্ছে বলে বিশ্বের নামকরা কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রতিবেদনও আসে।
আচ্ছা, এত নেগেটিভ দিক কেন আলোচনা করা হল?
আমার একটা বিশ্বাস হল, মানুষ কোন কাজে সফল না হতে পারার কারণ হল তারা সঠিক পথে না গিয়ে ভুল পথে যায়। আপনি যদি তাদের ভুল পথ সম্পর্কে সাবধান করে দিতে পারেন, তারা কোন না কোনভাবে সঠিক পথে এগিয়ে যাবে।
এবার চলুন সঠিক পথ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
আগে যেমন বলেছি, ফ্রিল্যান্সিং মানে কোন একটা ফিল্ডে দক্ষ হওয়া যে কাজটা অনলাইনের মাধ্যমে অন্য দেশের ক্লায়েন্টরা অফার করে থাকে। কয়েকশ ক্যাটাগরির কাজ অনলাইনে আছে। আইটি, নন-আইটি, বিজনেস, ক্রিয়েটিভ, ইঞ্জিনিয়ারিং সব খাতের জন্যই কাজ আছে। এই লেখার শেষে কাজের ক্যাটাগরি গুলোর লিংক অ্যাটাচ করা থাকবে। সাথে এখনকার সময়ে ডিমান্ডিং জব ফিল্ড গুলার একটা স্টাডি।