যেভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়

যেভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়

খাদ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ বা ‘ফুড পয়জনিং’ ঘটে মূলত নষ্ট হওয়া খাবার বা পানীয় গ্রহণের পর। কারণ নষ্ট খাবার খেলে তা হজম হয় না; ফলে শরীর অসুস্থ হয়। ভালোবাসায় শরীরের যত উপকার – মানুষ কেন ভালোবাসে

খাদ্য-বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর খবর মাঝেমধ্যে পত্রিকায় দেখতে পাওয়া যায়। খাদ্য-বিষক্রিয়ার মূলে থাকে অনিষ্টকারী কোনো ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস বা প্যারাসাইট। নানান কারণে এগুলি খাবারের মধ্যে থাকতে পারে; সেই খাবার খেলে এই জীবানুগুলো শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে মানুষকে অসুস্থ করে। অনেক সময়েই খাদ্য-বিষক্রিয়া মারাত্বক নয় – কয়েক দিনের মধ্যেই শরীর ঠিক হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো খাবারে বিষক্রিয়া সম্পর্কে-

  • ভাইরাস বা প্যারাসাইটগুলি কি:
  • যেগুলি ভয়াবহ, সেগুলি হল: সাল্মোনেল্লা, ই-কোলাই, ক্লোস্ট্রিডিয়াম বচুলিনাম ও টক্সোপ্লাজমা গণ্ডাই। এগুলিকে বাদ দিলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কেন খাদ্য-বিষক্রিয়া হল তা ধরা পরে না।
  • যেভাবে খাবার সংক্রমিত হয়:

সব ধরনের খাবারেই জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। তবে খাবার যখন রান্না করা হয় তখন এই রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু তাপে ধ্বংস হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই যেকোনো খাবার কাঁচা খাওয়ার ক্ষেত্রে খাদ্যে বিষক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি।

আবার রান্না করা খাবারও ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তা খাওয়ার সময় আবার গরম না করলে কিংবা তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে তা থেকে বিষক্রিয়ার শিকার হওয়া আশঙ্কা থাকে। তাই খাবার গরম খাওয়া এবং যেকোনো খাবারের সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি জানতে হবে প্রতিটি মানুষের।

নানান ব্যাক্টেরিয়া জন্তুজানোয়ারের শরীরে, মাটিতে, জলে, ধুলোতে রয়েছে। এগুলোর সংস্পর্শে এসে হাত ব্যাক্টেরিয়া-নাশক সাবান দিয়ে পরিষ্কার জলে না ধুয়ে খাবারে হাত দিলে, ব্যাক্টেরিয়া খাবারে এসে যেতে পারে।

  • যেভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়:

বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী ও বিষাক্ত উপাদান খাবারে থাকতে পারে যা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে সক্ষম।

‘এন্টামোয়িবা’ খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টির দিক খেকে সবার চাইতে এগিয়ে। এরপর আছে যথাক্রমে ‘ক্যাম্পাইলোব্যাকটার’, ‘সালমোনেলা’, ‘ই-কোলি’ ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া এবং ‘নোরোভাইরাস’।

‘এন্টামোয়িবা’ হল এক কোষীয় ‘প্রোটোজোয়া’ যা খাবার ও পানীয় দুইয়ের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে।

মলের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে আসলে সেখানে থেকে তা শরীরে প্রবেশ করতে সক্ষম।

‘ক্যাম্পাইলোব্যাকটার’য়ের দেখা মেলে পশুপাখির অন্ত্রে। সংক্রমিত পশুপাখির মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষ এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের শিকার হয়।

‘সালমোনেলা’ ব্যাকটেরিয়া থাকে মুরগির মাংস, ডিম, শসা, তরমুজ, পেস্তা বাদাম ইত্যাদিতে।

‘ই-কোলি’য়ের সংক্রমণ ঘটে অপাস্তুরিত দুধ ও কাঁচা শাকসবজি গ্রহণের মাধ্যমে।

পশু কিংবা মানুষের মলের মাধ্যমে সংক্রমিত পানির মাধ্যমেও ‘ই-কোলি’য়ের সংক্রমণ হওয়া সম্ভব। এই জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী, এক মানুষ থেকে আরেক মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে সহজেই।

  • খাবারে বিষক্রিয়ার লক্ষণ:

খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ নির্ভর করবে কোন জীবাণুর সংক্রমণ ঘটেছে তার ওপর। সাধারণত যে উপসর্গগুলো দেখা যায় তা হল- বমিভাব, বমি, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, খাওয়ার রুচি হারানো, শারীরিক দুর্বলতা, হালকা জ্বর ইত্যাদি।

সাধারণত খাদ্যে বিষক্রিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়া শুরু করে সংক্রমিত খাবার খাওয়ার কয়েক দিন পর থেকে। এই সময়সীমাও নির্ভর করবে রোগী কী ধরনের জীবাণুর আক্রমণের শিকার হয়েছে তার ওপর।

‘এন্টামোয়িবা’য়ের সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিতে সময় লেগে যেতে পারে এক থেকে চার সপ্তাহ।’

  • পরীক্ষা ও চিকিৎসা:

কোন জীবাণুর আক্রমণের শিকার হয়েছেন তা জানতে হলে মল পরীক্ষা করতে হবে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার চিকিৎসা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই করে ফেলা সম্ভব। তবে সংক্রমণের মাত্রার ওপর নির্ভর করে ভোগান্তি, আরও বেশি সময়ও হতে পারে।

তেল মসলা ছাড়া খাবার, রুটি, আপেল, ভাত ইত্যাদি দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মাফিক ওষুধও খেতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *