‘৫:২ ডায়েট’ওজন কমানোর ম্যাজিক: সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের গবেষকেরাও দাবি করেছেন, অন্য যেকোনো পদ্ধতির চেয়ে ৫:২ ডায়েট বেশি সহজ ও আকর্ষণীয়। দেহের ওজন কমাতে খাওয়া-দাওয়া বলতে গেলে ছেড়েই দিয়েছেন, এমন মানুষ আশপাশে অসংখ্য। তবে এতে লিকলিকে শরীর পেলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক, সেই সঙ্গে কম খাওয়ার অভ্যাসও ক্লান্তির। যারা খাবার এবং ক্ষীণ-তনু দুটিই ভালোবাসেন, তাদের জন্য ভালো বন্দোবস্ত হতে পারে ‘৫:২ ডায়েট’।
গত দশকে বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই ‘৫:২ ডায়েট’। হাজার হাজার মানুষ অনুসরণ করছেন এই কৌশল। ‘৫:২ ডায়েট’ হলো সময়সীমা বেঁধে দিয়ে প্রায় স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া চালিয়ে যাওয়ার একটি পদ্ধতি। এটি মেনে চললে সপ্তাহে পাঁচ দিন যা মন চায় তা-ই খাওয়া যাবে, তবে পরিমাণ মাত্রাছাড়া হওয়া চলবে না। আর সপ্তাহের বাকি দুদিন ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ হবে একেবারেই কম, মোটামুটিভাবে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ ক্যালরি। খালি পেটে খেজুর ৮ উপকারিতা ২০২২
না খেয়ে ওজন কমানোর প্রচলিত কৌশলের চেয়ে এই ৫:২ ডায়েটে স্বাস্থ্যগত সুবিধা অনেক বেশি বলে দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়। বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য দৈবচয়নের ভিত্তিতে স্থূলদেহী ৩০০ স্বেচ্ছাসেবককে বেছে নিয়েছিলেন কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের গবেষকেরা। এই ৩০০ জনকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে পুরো এক বছর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
এর মধ্যে প্রথম ১০০ জনের জন্য এক দিনের একটি কর্মশালা পরিচালনা করা হয়, যেখানে দেহের ওজন কমানোর প্রচলিত পদ্ধতি নিয়ে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এই ১০০ জনকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ডায়েরিতে নিয়মিত খাবারের হিসাব লিখে রাখা, অপ্রয়োজনীয় স্ন্যাকস এড়ানোসহ বিভিন্ন টিপস দেয়া হয়। অন্য ১০০ জনের দলটির নাম দেয়া হয়েছিল ‘স্ব-সহায়ক গ্রুপ’ বা সেলফ-হেল্প গ্রুপ। এই ১০০ জনকে আনা হয় ‘৫:২ ডায়েট’-এর আওতায়। তবে তাদের কেবল বিভিন্ন খাবারের পুষ্টিমানসহ বিভিন্ন বিবরণের পুস্তিকা এবং সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু অনলাইন লিংক দিয়েছিলেন গবেষকেরা। গ্রুপের সদস্যরা বিশেষ আর কোনো সহায়তা পাননি গবেষণার সময়সীমায়।
শেষ ১০০ জনও ৫:২ ডায়েট সম্পর্কে পরামর্শ ও বিভিন্ন নথি পেয়েছিলেন, তবে তাদের জন্য বাড়তি বরাদ্দ ছিল ছয় সপ্তাহের একটি বিশেষ সহায়তা সেশন। ওই সেশনে তারা গ্রুপের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ডায়েট সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা এবং বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এক বছর পর দেখা গেছে, ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে তৈরি তিনটি গ্রুপই কিছু না কিছু ওজন হারিয়েছে। তবে প্রচলিত ডায়েট অনুসরণ করা গ্রুপের ১৫ শতাংশ সদস্য শরীরের ওজন কমপক্ষে পাঁচ ভাগ হারান। ‘৫:২ ডায়েট’ অনুসরণ করা বাকি দুটি গ্রুপে কমপক্ষে পাঁচ ভাগ ওজন হারানো সদস্যদের হার ছিল এর চেয়ে বেশি।
‘স্ব-সহায়ক গ্রুপের’ ১৮ শতাংশ সদস্য এবং বিশেষ সেশনের সুবিধা পাওয়া গ্রুপের ২৮ ভাগ সদস্য এক বছরে হারিয়েছেন শরীরের পাঁচ ভাগ ওজন। গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা শেষ পর্যন্ত ৫:২ ডায়েটকেই বেশি পছন্দ করেছেন এবং গবেষণা শেষেও নিজেদের জীবনে এই ডায়েট অনুসরণে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য মনোবিজ্ঞানী কেটি মায়ার্স স্মিথ বলেন, ‘গবেষণাটির মাধ্যমে আমরা বাস্তবজীবনে সহজে মেনে চলার উপযোগী ৫:২ ডায়েটের কার্যকারিতা সম্পর্কে একটি ফলাফল উপস্থাপন করতে পেরেছি। ‘আমরা দেখেছি, ৫:২ ডায়েট ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রথাগত পদ্ধতির বিশাল বড় কিছু না হলেও অনুসরণকারীরা এই কৌশলটিকে বেশি পছন্দ করেছেন। এর কারণ পদ্ধতিটি সহজ এবং বেশ আকর্ষণীয়।’
৫:২ ডায়েটিং প্রচলিত ওজন কমানোর বিভিন্ন পদ্ধতির তুলনায় চমকে ওঠার মতো ফল দিতে না পারলেও গবেষকেরা বলছেন, এটি মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। আর তাই ওজন কমানোর যুদ্ধে নেমে যারা জীবনকে বিপন্ন করে তুলছেন, তাদের জন্য এটি স্বস্তি বয়ে আনতে পারে। কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা তাদের নিবন্ধের উপসংহারে লিখেছেন, ‘দেহের ওজন ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দানকারী চিকিত্সকেরা ৫:২ ডায়েট সুপারিশ করার কথা বিবেচনায় নিতে পারেন। কৌশলটি প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অতি উচ্চতর না হলেও এটি অনেক সহজ এবং আকর্ষণীয়।’